স্বাগতম জাতীয় শুদ্ধচার কৌশল, তথ্য অধিকার আইন ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা বিষয়ক প্রশিক্ষণে
প্রশিক্ষণের যৌক্তিকতা
রাষ্ট্রের অন্যতম লক্ষ্য ও দায়িত্ব হলো আইনের শাসন, সমতা, মৌলিক মানবাধিকার এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রয়োজন সুশাসন ও শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠা এবং রাষ্ট্রকে দুর্নীতিমুক্ত রাখা। এই বিবেচনাবোধ থেকে ২০১২ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলপত্র গৃহিত হয়। রাষ্ট্রীয় জীবন এবং রাষ্ট্র পরিচালনার সকল ক্ষেত্রে সুশাসন, স্বচ্ছতা, নৈতিকতা ও সততা নিশ্চিত করার এটি একটি কৌশলগত জাতীয় দলিল। এই দলিলের লক্ষ্য পুরণে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আমরা জানি, সুশাসন ও দুর্নীতিমূক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ট সাংবাদিকতার গুরুত্ব অপরিহার্য। আর সাংবাদিকতা ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় তথ্য ও নথিপত্রের গুরুত্ব অপরিসীম। যেকোন প্রতিবেদন দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করার প্রমাণ হিসেবে প্রয়োজন প্রাসংগিক তথ্য ও নথিপত্র। প্রমাণ বা নথিপত্র সংগ্রহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম তথ্য অধিকার আইন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সাংবাদিকদের কাছে তাই তথ্য অধিকার আইন বেশ জনপ্রিয়। বাংলাদেশে ২০০৯ সাল থেকে তথ্য অধিকার আইনের যাত্রা শুরু হয়। বাংলাদেশের গণতন্ত্র, সরকার এবং সরকারে সাথে সম্পৃক্ত সকল প্রশাসনকে স্বচ্ছ, জবাবদিহি ও গণমুখী করে তোলার অন্যতম উপায় তথ্য অধিকার আইন। দেশে এটি একমাত্র আইন যা নাগরিকের প্রয়োগের ওপরই এর সফতা নির্ভর করে।
এই প্রয়োজনবোধ থেকে সাংবাদিক ও নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দের জন্য ‘জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল, তথ্য অধিকার আইন ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা’ বিষয়ে এই অনলাইনভিত্তিক প্রশিক্ষণটি প্রণয়ন করা হয়। এই প্রশিক্ষণের মূল লক্ষ্য হলো অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল ও তা বাস্তবায়নের উপায়সমূহ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি এবং যাতে তথ্য অধিকার আইন ব্যবহার করে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা চর্চায় উৎকর্ষতা সাধনে তাদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। আমরা বিশ্বাস করি, এই প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলের লক্ষ্য বাস্তবায়নে তথ্য অধিকার আইন, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা, অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা, হুইসেল ব্লোয়ার আইন ইত্যাদি হাতিয়ার প্রয়োগের মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র শক্তিশালীকরণ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অংশগ্রহণকারীদের জন্য অবদান রাখার অপূর্ব সুযোগ তৈরি হবে।
এই প্রশিক্ষণটি অনলাইন স্ব-শিক্ষণ, ভিডিও ও মিথস্ক্রিয়া (Interactive) সেশনের সমন্বয়ে সুবিন্যস্ত। এখানে সর্বমোট তিনটি মডিউল আছে। এই মডিউলিগুলি সম্পন্ন করতে অংশগ্রহকারীদের তিন সপ্তাহ সময় প্রয়োজন হবে। প্রতি সপ্তাহে একটি করে মডিউল অংশগ্রহণকারীদের সম্পন্ন করতে হবে। নির্ধারিত সপ্তাহে নির্ধারিত মডিউলের ওপর অংশগ্রহণকারীরা নিজেদের সুবিধামতো সময়ে অনলাইনে লগিং করেবেন। তারপর সেখানে নির্ধারিত আলোচনাপত্রগুলো পাঠ করবেন, ভিড্ওি দেখবেন এবং সশ্লিষ্ট বিষয়ের ওপর নিজের বোঝাপড়া ও উপলদ্ধি তৈরি করবেন। তারপর মডিউলের সাথে সংগতিপূর্ণ সংযুক্ত কার্যক্রম (Assignment) সম্পন্ন করবেন এবং কুইজে অংশগ্রহণ করবেন। প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীকে নির্ধারিত সপ্তাহে নির্ধারিত মডিউলের ওপর কার্যক্রম (Assignment) এবং কুইজ সম্পন্ন করতে হবে। প্রতিটি মডিউল শেষে প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীকে একটি ৬০ মিনিটের অনলাইন মিথষ্ক্রিয়া (Online Interactive) সেশনে অংশগ্রহণ করতে হবে যেখানে সংশ্লিষ্ট মডিউলটির ওপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা ও প্রশ্ন-উত্তর পর্ব থাকবে।প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সম্পন্ন হলে এসাইনমেন্ট ও কুইজের উপর প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে প্রত্যেক অংশগ্রহণকারী অটো জেনারেটেড সার্টিফিকেট পাবেন।
প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য
- সরকার কর্তৃক গৃহীত জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল বিষয়ে পেশাদার সাংবাদিক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের অবহিত করণ ও সচেতনতা বৃদ্ধি করণ।
- জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলের লক্ষ্যসমূহের সহিত সংগতি রেখে এবং এর লক্ষ্যসমূহ অর্জনে তথ্য অধিকার আইনের প্রয়োগের মাধ্যমে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা জোরদার করণ।
- নাগরিকের ক্ষমতায়ন এবং অধিকার প্রতিষ্ঠায় তথ্য অধিকার আইন প্রয়োগের প্রয়োজনীয় দক্ষতা বৃদ্ধি করণ।
- অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার কৌশল ও দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সার্বিকভাবে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা পালনে প্রয়োজনীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি করণ যা নাগরিক সেবা এবং শাসন ব্যবস্থায় সরকারের কর্মকান্ডে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে সহায়াক হবে।
প্রশিক্ষণের কাঠামো
মডিউল -১ : জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল
- বিষয় ১.১: শুদ্ধাচার ও জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল ধারণা
- বিষয় ১.২: জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলের প্রেক্ষাপট, ভিত্তি ও লক্ষ্য
- বিষয় ১.৩: জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলের মূল উপাদান ও অন্তর্ভূক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহ
- বিষয় ১.৪: জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়ন কাঠামো
- বিষয় ১.৫: জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়নের প্রধান প্রধান টুল বা হাতিয়ার
- (হুইসেল ব্লোয়ার এ্যাক, অভিযোগ নিস্পতিকরণ পদ্ধতি)
মডিউল- ২ : তথ্য অধিকার আইন
- বিষয় ২.১: সুশাসন প্রতিষ্ঠায়/জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়নে তথ্যে প্রবেশাধিকারের গুরুত্ব
- বিষয় ২.২: তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ : প্রেক্ষপট, স্বীকৃতি ও গুরুত্ব
- বিষয় ২.৩: তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ সবল ও দুর্বলদিক
- বিষয় ২.৪:তথ্য অধিকার আইনের আওতায় ‘তথ্য’ তথ্য প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ ও তথ্য প্রাপ্তি প্রক্রিয়া
- বিষয় ২.৫: তথ্য প্রাপ্তির আবেদন প্রক্রিয়া
- বিষয় ২.৬: আপীল দায়ের ও নিষ্পত্তি
- বিষয় ২.৭: অভিযোগ দায়ের ও নিষ্পত্তি
- বিষয় ২.৮: অপ্রদানযোগ্য তথ্য এবং তথ্য প্রদান থেকে দায়মুক্ত প্রতিষ্ঠান
- বিষয় ২.৯: স্ব-প্রনোদিত তথ্য প্রকাশের ধারণা ও পদ্ধতি
- বিষয় ২.১০: তথ্য কমিশন: গঠন কাঠামো, ভূমিকা ও কার্যাবলী
মডিউল- ৩ : অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা
- বিষয় ৩:১: সাংবাদিকতা ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা
- বিষয় ৩.২: জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়নে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার গুরুত্ব
- বিষয় ৩.৩: অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরির ধাপসমূহ
- বিষয় ৩.৪: অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের জন্য তথ্য সংগ্রহের টুলস বা হাতিয়ারসমূহ
- বিষয় ৩.৫: অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় তথ্য অধিকার আইনের গুরুত্ব, প্রয়োগ ও করণীয়
- বিষয় ৩.৬: অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জসমূহ ও তা উত্তোরণের কৌশল
- বিষয় ৩.৭: তথ্য অধিকার আইন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিপরীতে রক্ষাকবচ
মডিউল-১ : জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল
ভূমিকা ও উদ্দেশ্য:
‘জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল’ হলো এই প্রশিক্ষণের প্রথম মডিউল। এটি প্রশিক্ষণের মূলভিত্তি যাকে ঘিরে পরবর্তী মডিউল দুটি প্রণীত হয়। এই মডিউলে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল কী, কোন প্রেক্ষাপটে, এবং কিসের ওপর ভিত্তি করে এটি প্রণীত হলো, কীভাবে এই কৌশল বাস্তবায়ন হচ্ছে, কারা কীভাবে এই কৌশল বাস্তবায়নে দায়বদ্ধ,এই কৌশলের সফল বাস্তবায়নের কি কি উপায় বা হাতিয়ার রয়েছে – এসব বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় দলিল। এই দলিল বাস্তবায়ন এককভাবে সরকার এবং সরকারি দপ্তরগুলির ওপর নির্ভর করে না। এর সফল বাস্তবায়নে নাগরিকদেরও বিশাল ভূমিকা রয়েছে। তাই জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল সম্পর্কে প্রত্যেক নাগরিকের সুষ্পষ্ট ধারণা থাকা দরকার। এই বোধ থেকে নাগরিকদের বিশেষ করে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও সাংবাদিকদের উপযোগিতা মাথায় রেখে এই মডিউলের আলোচনাসমূহ বিন্যস্ত করা হয়।
এই মডিউলে অংশগ্রহণ শেষে, অংশগ্রহণকারীরা-
- শুদ্ধাচার ও জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল সম্পর্কে ধারণাসমূহ ব্যাখ্যা করতে পারবেন
- বাংলাদেশে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল প্রণয়নের প্রেক্ষাপট, প্রয়োজনীয়তা, ভিত্তি ও লক্ষ্যসমূহ বর্ণনা করতে পারবেন
- জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলের পরিধি, আওতাভূক্ত প্রতিষ্ঠান এবং এর বাস্তবায়ন কাঠামো উল্লেখ করতে পারবেন
- জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়নের উপায় বা হাতিয়ারগুলি চিহ্নিত করতে পারবেন এবং এগুলি ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা ও প্রক্রিয়া বর্ণনা করতে পারবেন।
আলোচ্যবিষয়: ১.১: শুদ্ধাচার ও জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল সম্পর্কে ধারণা
শুদ্ধাচার >> জাতীয় শুদ্ধাচার >> সুশাসন ও জাতীয় শুদ্ধাচার>> বাংলাদেশে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল |
‘শুদ্ধাচার’ ধারণা
শুদ্ধাচার কথাটি ‘শুদ্ধ ও আচার’ শব্দের সমন্বয়ে সৃষ্টি। শুদ্ধ, নিয়মানুবর্তী ও নির্দোষ যে আচরণ, তাকেই শুদ্ধাচার বলা যায়। তাই শুদ্ধাচার বলতে আমরা সাধারনভাবে আচরণে, কর্মে ও দায়িত্ব পালনে শুদ্ধতা চর্চা ও বজায় রাখার প্রয়ায়শকেই বুঝে থাকি। শুদ্ধাচার শব্দের অর্থ চরিত্রনিষ্ঠা। সাধারণত ‘নৈতিকতা ও সততা’ দ্বারা প্রভাবিত আচরণ ও উৎকর্ষ সাধনকে শুদ্ধাচার বলা হয়। শুদ্ধ বলতে সহজ ভাষায় পবিত্র, সাধু, খাঁটি, পরিষ্কার, শোধিত, নিষ্কলুষ, নিষ্কণ্টক, নির্ভুল ও নির্দোষ ইত্যাদি বোঝায়। কোন মানুষের চরিত্রের বৈশিষ্ট্য প্রকাশের জন্য যখন সমাজ বা অন্যকেউ এই অভিধাগুলোর ব্যবহার ও প্রয়োগ করে, তখনই সেই মানুষ ‘শুদ্ধ মানুষ’ হিসেবে গণ্য হন। ব্যক্তি ও পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ জীবন ধারণের জন্য ভালো আচরণ, ভালো রীতিনীতি, ভালো অভ্যাস রপ্ত করাকে শুদ্ধাচার বলা হয়ে থাকে।
ব্যক্তি পর্যায়ে শুদ্ধাচার:
ব্যক্তি পর্যায়ে শুদ্ধাচার হলো সততা ও নৈতিকতা দ্বারা প্রভাবিত ব্যক্তির উৎকর্ষ আচরণ। এ আচরণগুলির মধ্যে রয়েছে সত্যবাদী হওয়া ও কাজে কর্তব্যনিষ্ঠ হওয়া, আদর্শ, রীতিনীতি ও মূলনীতিসমূহ মেনে চলা এবং এগুলি অর্জনে প্রতিশ্রুতিব্ধ হওয়া। একজন মানুষের নৈতিকতা শিক্ষা শুরু হয় পরিবারে এবং শুদ্ধাচার অনুসরণের ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। পরের ধাপে আছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান; নৈতিক জীবন গড়ার ক্ষেত্রে এরভূমিকা অপরিসীম।
প্রতিষ্ঠানিক পর্যায়ে শুদ্ধাচর:
ব্যক্তির সমষ্টিতেই প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি হয় এবং তাদের সম্মিলিত লক্ষ্যই প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যে প্রতিফলিত হয়। প্রতিষ্ঠানের শুদ্ধাচারের মধ্যে প্রতিষ্ঠানের নীতিমালা, ব্যবস্থা ও কর্মপদ্ধতি যথাযথ অনুসরণ অন্তর্ভূক্ত। যেহেতু প্রতিষ্ঠানগুলি জনগণের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়, তাই প্রতিষ্ঠানের শুদ্ধাচার অর্জনের জন্য ব্যক্তির শুদ্ধাচার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ ব্যক্তির শুদ্ধারের ওপর প্রতিষ্ঠানের শুদ্ধাচার নির্ভর করে।
জাতীয় পর্যায়ে শুদ্ধাচার:
প্রতিষ্ঠানগুলি সাধারণত: পাস্পরিক নির্ভরশীলতা ও আন্ত:সম্পর্কের মধ্য দিয়ে পরিচালিত হয়। জাতীয় পর্যায়ে শুদ্ধাচার নির্ভর করে মূলত: দেশের প্রতিষ্ঠান বা সংস্থাগুলি কতভালভাবে আন্ত:সম্পর্ক, আন্ত:সহযোগিতা ও আন্ত:সমন্বয় বজায় রেখে পরিচালিত হয়, তার ওপর। এসব প্রতিষ্ঠানের আচরণের সমষ্টিগত প্রভাব এমন পরিবেশ তৈরি করে যেখানে দূর্নীতির ব্যাপারে সহজে প্রশ্ন উত্থাপন করা যায়। এরকম একটি পরিবেশ তৈরি জন্য প্রয়োজন দৃঢ় রাজনৈতিক সদিচ্ছা।
জাতীয় শুদ্ধাচার ধারণা
১৯৯০ সালে Transparency International (TI) এর MD জেরেমি পপ National Integrety System ধারণাটিকে বৈশ্বিক পরিসরে জনপ্রিয় হরে তোলেন। জাতীয় শুদ্ধাচার হচ্ছে একটি আদর্শিক মানদন্ড যা নিদিষ্ট জাতির বা সমাজের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, নীতি, প্রথা, ধর্ম প্রভৃতির উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠা মানুষের আচরণের সমষ্টি। ‘জাতীয় শুদ্ধাচার’ ধারণাটি ‘ National Integraty System Temple’ ধারণার সাথে সংগতিপূর্ণ। টেকসই উন্নয়ন, আইনের শাসন, সকল নাগরিকের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে, কেবল আইন সভা, বিচার বিভাগ ও জনপ্রশাসন নয়, নাগরিক সমাজ, মিডিয়া, বেসরকারীখাত এবং অন্যান্য সকলকে তাদের শুদ্ধাচার বৃদ্ধি করা দরকার। যদি এসব স্তম্বের যেকোন একটি শুদ্ধাচার অনুশীলনে ব্যর্থ হয়, তাহলে ঘরটি তার ভারসাম্য হারাবে এবং টেকসই উন্নয়ন, আইনের শাসন এবং জীবন যাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষ্যসমূহ অর্জন ব্যাহত হবে।
জাতীয় শুদ্ধাচার ব্যবস্থা বা NIS কেবল উন্নয়নশীল দেশে যে প্রবর্তন হয় তা নয়, অনেক উন্নত দেশ যেমন নেদারল্যান্ডস, নিউজি ল্যান্ড ইত্যাদি দেশেও এ ধরনের NIS ব্যবস্থার প্রচলন রয়েছে। জাতীয় শুদ্ধাচার এমন একটি ব্যবস্থা যা ওপরে উল্লেখিত স্তম্বগুলির শুদ্ধাচার অনুশীলনের ওপর নির্ভর করে।
সমাজ ও রাষ্ট্রে দুর্নীতি দূর ও শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাে একে অপরের সংগে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। রাষ্ট্র আইনকানুন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে তাতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে, সমাজ তা প্রতিপালন করে; সেইসঙ্গে সমাজের নীতিচেতনা ও মূল্যবোধও রাষ্ট্রে প্রতিফলিত হয়। এই সম্পর্কের জটাজালে ব্যক্তিমানুষের নৈতিকতা ও শুদ্ধতার উন্নয়ন ও প্রতিষ্ঠা যেমন প্রয়োজন, তেমনি তার সাথে যুক্তরূপ প্রতিষ্ঠানগত শুদ্ধাচার উন্নয়ন ও প্রতিষ্ঠা জরুরী।
সুশাসন ও জাতীয় শুদ্ধাচার
সুশাসন ও জাতীয় শুদ্ধাচার অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। ‘সুশাসন’ অর্থ হলো ভালো শাসন। আর শাসন ধারণাটি আমাদের কাছে নতুন নয়। এটি মানব সভ্যতার মতোই পুরনো। শাসন বলতে সাধরণত সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া বা আইন, নীতি, পদ্ধতি ইত্যাদি প্রণয়ন প্রক্রিয়া এবং এসব গৃহিত সিদ্ধান্ত/নীতি পদ্ধতি কার্যকর, দক্ষ ও ন্যায়সঙ্গতভাবে বাস্তবায়িত হওয়ার প্রক্রিয়াকে বোঝায়। শাসন ধারনাটি বিভিন্ন পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবহৃত হয় যেমন করপোরেট শাসন, বৈশ্বিক শাসন, জাতীয় শাসন, স্থানীয় শাসন ইত্যাদি। শাসন প্রক্রিয়ায় আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক উভয় ধরনের Actors সিদ্ধান্ত গ্রহণে যুক্ত থাকে এবং আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক কাঠামোর মধ্য দিয়ে এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়। সুতরাং শাসন প্রক্রিয়ায় অনেক Actors’র মধ্যে সরকার একটি গুরুত্বপূর্ণ Actor। অন্যান্য Actors’র মধ্যে মিডিয়া, নাগরিক সমাজ, ব্যবসায়ী ইত্যাদি বহু Actors রয়েছে । শাসন ধারনাটি নব্বই দশকে ভিন্ন মাত্রা লাভ করে সুশাসন ধারণায় পরিবর্তত হয়। মূলত: রাষ্ট্রের নাগরিকমণ্ডলীর মধ্যে সমতা বিধান, মাবাধিকার সংরক্ষণ, রাষ্ট্রীয় কর্মকান্ডে নাগরিকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ, এবং সম্পদের স্থায়ীত্বশীল ব্যবস্থাপনা হলো সুশাসন। সুশাসন হলো এমন এক আদর্শিক ব্যবস্থা যা একটি দেশের রাজনৈতিক,অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ঘটায় এবং রাষ্ট্রীয় কাজে স্বচ্ছতা,জবাবদিহীতা, প্রশাসিনক দক্ষতা, আইনের শাসন, মানবাধিকার তথা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে নিশ্চিত করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। একটি রাষ্ট্রের সুশাসনের কতগুলি বৈশিষ্ট্রের ব্যাপারে ইতোমধ্যে একটি বৈশ্বিক ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। আর সেগুলি হলো:
১.অংশগ্রহণ: সিদ্বান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারী ও পুরুষের অংশগ্রহণ সুশাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য
২.স্বচ্ছতা: যথাযথ নিয়ম-নীতি মেনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তার বাস্তবায়ন এবং এই নীতি বা সিদ্ধান্ত যাদের প্রভাবিত করবে তাদের জন্য তথ্য পাওয়ার সুযোগ থাকা
৩. জবাবদিহিতা: এটি সুশাসনের অন্যতম চাবিকাঠি। এর অর্থ হলো জনগণের কাছে সরকার ও প্রশাসনের জবাবদিহিতা
৪.ঐক্যমতের শাসন: সমাজে ভিন্নমত ও পথ থাকা স্বাভাবিক। এসবের মধ্যে বৃহত্তর স্বার্থ ঐক্যমত তৈরি করা
৫. সংবদেনশীলতা: একটি যুক্তিসংগত সময়সীমার মধ্যে জনগণের চাহিদা অনুযায়ী সেবা প্রদান করা
৬. আইনের শাসন: যথাযথ আইনী কাঠামো এবং তারি নিরপেক্ষ প্রয়োগ
৭. সুযোগের সমতা ও অন্তর্ভূক্তিতা: ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, এবং জাতি নির্বিশেষে সকলের জন্য সমান সুযোগ তৈরি এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভূক্ত করা
৮. দক্ষতা ও কার্যকারিতা: সিদ্ধান্ত বা নীতির দক্ষ ও কার্যকর প্রয়োগ
নাগরিকের মৌলিক মানবাধিকার, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য এবং স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত করার জন্য সুশাসন প্রতিষ্ঠা রাষ্ট্রের আবশ্যকীয় কর্তব্য। সেই সুশাসন প্রতিষ্ঠায় দুর্নীতি দমন এবং শুদ্ধাচার প্রতিপালন একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং অপরিহার্য পরাকৌশল। জাতীয় শুদ্ধাচারের মূল লক্ষ্য হল শুদ্ধাচার চর্চা ও দুর্নীতি প্রতিরোধের মাধ্যমে রাষ্ট্র সমাজে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা।
বাংলাদেশে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে গেলেও ক্রমাগত রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের যাতাকলে এবং বিভিন্ন অর্থ-সামাজিক পশ্চাঁদপদতা / প্রতিবন্ধকতার কারণে সুশাসন নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। সুশাসন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে দুর্নীতি, আমলাতান্ত্রিকতা, দারিদ্র্য, সরকারি কাজে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ না থাকা সর্বপরি প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিক জবাবদিহিতার অভাব প্রধান অন্তবায় হিসেবে কাজ করছে।
দেশে রাষ্ট্রীয় কাজে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা এবং দূর্নিতী দমন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বিভিন্ন সময় বহুবিধ আইন, বিধি-বিধান প্রণয়ন করা হয়েছে কিন্তু দুর্নীতিকে দমন করা সম্ভব হয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়নের বিষয়টি নিয়ে বিভিন্নমুখী আলোচনা হচ্ছে। বিশৃঙ্খলা, অনিয়ম, অসাধুতা ও অনৈতিকতার চর্চারোধে সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতি দমনে শুদ্ধাচার প্রতিপালন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রাষ্ট্রের সকল উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির মূল কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে দেশের সেবা খাত। সেখানে শৃঙ্খলা, সুশাসন এবং সর্বোপরি শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠা ছাড়া সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের আশা করা বৃথা। শুদ্ধাচারের চর্চা না থাকলে বিশৃঙ্খলা, অনিয়ম, দুর্নীতি সহসাই বাসা বাঁধে। ফলে সমৃদ্ধি ও উন্নয়ন প্রক্রিয়া চরম হুমকির মধ্যে পড়ে।
আমাদের রাষ্ট্রের অন্যতম লক্ষ্য ও দায়িত্ব হলো আইনের শাসন, সমতা, মৌলিক মানবাধিকার এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রয়োজন সুশাসন ও সকল ক্ষেত্রে শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠা এবং রাষ্ট্রকে দুর্নীতিমুক্ত রাখা। এই বিবেচনাবোধ থেকে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ২০১২ সালে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলপত্র প্রণীত হয়।
রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় এবং অরাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সমুহের পদ্ধতিগত সংস্কার, দক্ষতা উন্নয়ন এবং সর্বপরি একটি সমন্বিত ও সংঘবন্ধ উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে শুদ্ধাচারকে একটি আন্দোলন হিসেবে গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরী। আর এই কাজে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে পেশাদার সাংবাদিক এবং নাগরিক সমাজের সাক্রিয় প্রতিনিধিরা।
আলোচ্য বিষয় ১.২: জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলের প্রেক্ষাপট, ভিত্তি ও লক্ষ্য
জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল প্রণয়নের প্রেক্ষাপট
দুর্নীতির প্রবণতা বৃদ্ধি রোধে সরকারের অবস্থান
রাষ্ট্র ও সমাজের বিভিন্ন পরিস্থিতিতে দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য সরকার বিভিন্ন আইন-কানুন, প্রথা, পদ্ধতি, এবং প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার প্রবর্তনসহ বিভিন্ন উন্নয়ন উদ্যোগ গ্রহণ করে। আশা করা হয়েছিল যে, এগুলি দুর্নীতি প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। কিন্তু বাস্তবে প্রতীয়মান হয় যে, দক্ষ ও কার্যকর প্রয়োগের অভাবে এগুলির মাধ্যমে কাঙ্খিত ফল পাওয়া যাচ্ছিল না। বিভিন্ন আইন ও কার্যক্রমের মধ্যে সমন্বয় সাধনও এখানে একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়াল। এছাড়া, দেশে সরকারি, বেসরকারি এবং এনজিও খাতেও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে এবং এর সাথে বিপুল সম্পদের সংযোগও ঘটেছে। ফলে আগের সাংগঠনিক ব্যবস্থা ও পদ্ধতির মাধ্যমে এগুলির সুষ্ঠ বাস্তবায়ন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এতে সরকারি ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়নের সঙ্গে সশ্লিষ্ট লোকজনের দুর্নীতির সুযোগও বৃদ্ধি পেয়েছে। সর্বপরি সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়জনিত কারণে সমাজে দুর্নীতির প্রবণতা মারাত্মকভাবে বেড়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে সমন্বিত প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে সকল উদ্যোগের কার্যকারিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যেই সরকারের মধ্যে শুদ্ধাচার কৌশল প্রণয়নের তাগিদ সৃষ্টি হয়।
জাতিসংঘ দুর্নীতি বিরোধী সনদের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন ও নাগরিক সমাজের দাবি
স্বাধীনতা লাভের শুরু থেকে বাংলাদেশ জাতিসংঘের গৃহীত সকল নীতি ও কনভেনশনে অব্যাহতভাবে সমর্থন প্রদান করে আসছে।
উদ্দেশ্য
জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলের পেক্ষাপট ব্যাখ্যা করতে পারবেন
জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলের উপাদান বা ভিত্তি নির্ণয় করতে পারবেন এবং
জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলের লক্ষ্য বিষয়ে বর্ণনা করতে পারবেন
মুখ্য শব্দ সমূহ | সংবিধান, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যয় বিচার, মৌলিক মানবাধিকার, কৌশলপত্র, বিচার বিভাগ, আইন বিভাগ, শানস বিভাগ, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান, রুপকল্প |
দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম, ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্ত আর দুই লক্ষ মা বোনে ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল চালিকা শক্তি ছিল একটি সুখী, সমৃদ্ধ, শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিতকরণের কথা বলা হয়েছিল। একইসাথে গণপ্রজাতন্ত্রী বালাদেশের সংবিধানে “মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধারোধ” রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। যেখানে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে “এমন এক শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার” মাধ্যমে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত” হবে।
এছাড়া বাংলাদেশ জতিসংঘের দুর্নীতি বিরোধি কনভেনশনে একটি অনুসমর্থনকারী দেশ। দূর্নীতি নির্মুলের জন্য ফৌজদারী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ ও আন্তর্জাতিক আইনের মাধ্যমে দূর্নীতির প্রতিকার ছাড়াও দূর্নীতির ঘটনা যাতে না ঘটে তার জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এই কনভেনশনে। বাংলাদেশে তার ৬ষ্ট পঞ্চ বার্ষিক পরিকল্পনা (২০১১-২০১৬) এবং ‘রুপকল্প ২০২১” এবং পরিপ্রেক্ষিত পরিক্ল্পনা (২০১০-২০২১) এও সমধর্মী কর্মসূচী চিহ্নিত করা হয়েছে। এই দলিলে বিধৃত কর্ম-পরিকল্পনা সমূহে উল্লেখিত কনভেনশন ও পরিকল্পনা সমূহের লক্ষ্য অর্জনে প্রনীত একটি সমন্বিত কৌশল।
এই প্রেক্ষাপটে আইনের শাসন ও অর্থনৈতিক এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাষ্ট্র ও সমাজকে দূরনিতি মুক্ত রাখাতে কেবল রাষ্ট্রীয় নিয়মনীতি, আইনকানুন প্রনয়ন ও প্রয়োগই যথেষ্ঠ নয়। সংবিধানের এই নীতির সুষ্ঠ বাস্তবায়নে জন্য রাষ্ট্র ও সমাজের দূর্নিতী দমন ও শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠায় সমন্বিত কার্যক্রমে পরিচালনার সুসমন্বিত উদ্যোগ হিসেবে ‘সোনার বাংলাগড়ার প্রত্যয়: জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল’ শিরোনামে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলটিপত্রটি ১৮ অক্টোবর ২০১২ মন্ত্রী সভায় বৈঠকে কৌশলপত্রটি অনুমোদিত হয়।
শুদ্ধাচারের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত আইনকানুন ও নিয়মনীতি এবং গৃহীত পদক্ষেপ;
(ক) বাংলাদেশের সংবিধানের চেতনা নির্দেশ করে যে, বংলাদেশ হবে একটি ন্যায় ভিত্তিক, শুদ্ধাচারী সমাজ; এর নাগরিকবৃন্দ, পরিবার, রাষ্ট্র ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং সুশীল সমাজও হবে দূর্নীতি মুক্ত ও শুদ্ধাচারী। ব্যক্তি মানুষের জীবন ও সম্পতির নিরাপত্তা ও অধিকার সংরক্ষণ এবং সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য রাষ্ট্রের আইন কানুন ও বিধি বিধান প্রণীত হযেছে এবং অনুসৃত হচ্ছে। ১৯৭২ সালে ৪ নভেম্বর তারিখে গৃহীত আমাদের সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার কতিপয় মূলনীতি নির্ধারণ করা হয়। সেই অনুযায়ী আমাদের প্রত্যয় হলো:
১. মানুষের উপর মানুষের শোষণ থেকে মুক্ত ন্যায়ানুগ ও সাম্যবাদী সমাজ নির্মান নিশ্চিতকরণ (১০ অনুচ্ছেদ);
২. মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ (১১ অনুচ্ছেদ);
৩. মানব সত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিতকরণ (১১ অনুচ্ছেদ);
৪. সকল নাগরিকের জন্য সুয়োগের সমতা নিশ্চিতকরণ (১৯ অনুচ্ছেদ);
৫.নাগরিকের মধ্যে সম্পদের সুষম বন্ঠন এবং সুষম সুয়োগ-সুবিধা নিশ্চিতকরণ (১৯ অনুচ্ছেদ);
৬. জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে নারীর অংশগ্রহণ ও সুয়োগর সমতা নিশ্চিতকরণ (১৯ অনুচ্ছেদ);
৭. প্রত্যেকের যোগ্যতা বিবেচনা করে কর্মুনুয়ায়ী পারিশ্রমিক নিশ্চিতকরণ (২০ অনুচ্ছেদ)
৮. কোন ব্যক্তিকে অনুপার্জিত আয় থেকে অসমর্থকরণ ( ২০ অনুচ্ছেদ);
এই সুত্রে রাষ্ট্র ও সমাজে কার্যকরভাবে ন্যায় ও সততা পতিষ্ঠা এবং সফলতার সঙ্গে দূনীতি প্রতিরোধ ও শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠা সরকারের একটি মূল নীতি।
(খ) এছাড়া যেকোন ধরণের ক্ষমতা কিংবা সুয়োগের ব্যবহারের উদ্যোগ দূর্নীতি সংগঠিত করতে পারে। সেই জন্য দূর্নীতি প্রতিরোধে বিধান সুদুর অতীত থেকে চালু রয়েছে। এর মধ্যে ১৮৬০ সালের Penal Code-এ দূর্নীতি প্রতিরোধের বিধান। ১৯৪৭ সালে দূর্নীতি দমন আইন। এবং ২০০৪ সালের ৫ নভেম্বর আইনে ‘দেশে দুর্নীতি এবং দুর্নীতি মূলক কার্য প্রতিরোধের লক্ষ্যে দুর্নীতি ও অন্যান্য সুনির্দিষ্ট অপরাধের অনুসন্ধান ও তদন্ত পরিচালনার জন্য একটি স্বাধীন দূর্ণীতি দমন কমিশন প্রতিষ্ঠা এবঙ অনুষাঙ্গীক বিষয়াদি সস্পর্কে বিধান’ প্রণীত হয়। এই আইনের আওতায় যেসব কার্য অপরাধ বলে বিবেচিত হয় তা হল।‘(খ) The Prevention of Corruption Act, 1947 (Act 11 of 1947)- এর অধীন শাস্তিযোগ্য অপরাধ; (গ) The Penal Code 1860 (Act XLV of 1860)- এর sections 161-169, 217, 218, 408, 409 and 477A- এর অধীন শাস্তিযোগ্য অপরাধসমুহ’ এবং এইসব অপরাধের সাথে সংযুক্ত সহায়তাকারী ও ষড়যন্ত্রমূলক ও প্রচেষ্টামূলক অপরাধকার্য। এক্ষেত্রে ২০১২ সালের মানি লন্ডারিং আইনের আওতাধীন অপরাধ ও দুর্নীতি হিসেবে বিবেচিত।
যে সকল কর্মকান্ড দুর্নীতি হিসেবে বিবেচিত হবে উল্লেখিত আইনে বলা হয়েছে;
সহজ কথায় সরকারি কর্মচারীদের বৈধ পারিশ্রমিক ব্যতীত যেকোন ধরণের বকশিস গ্রহন; সরকারি কর্মচারীদের অসাধু উপায়ে প্রভাবিত করার জন্য বকশিশ গ্রহণ; সরকারি কর্মচারী কর্তৃক বিনামূল্যে মূল্যবান বস্তু গ্রহণ; কোন মানুষের ক্ষতি সাধরার্থে সরকারি কর্মচারীদের আইন অমান্যকরণ; সরকারি কর্মচারীর বেআইনী ব্যবসা পরিচালনা; কাউকে সুবিধা প্রদানের জন্য সরকারি কর্মচারী কর্তৃক আইনের নির্দেশ অমান্যকরণ, ভূল রেকর্ড ও লিপি প্রস্তুকরণ; অসাধু উপায়ে সস্পতি আত্মসৎকরণ; অপরাধমূলক বিশ্বাস ভঙ্গ; প্রতারণ; জালিযাতি, সরকারী নথিপত্র ও রেজিষ্টার, জামানত ইউল ইত্যাদি জালকরণ; হিসাবপত্র বিকৃতকরণ, অর্থ পাচার ইত্যাদি। অন্যবিধ আর্থিক দুর্নীতি, অনুপার্জিত সম্পদ লাভ ও ভোগ, অর্থসম্পত্তি পাচারের দূর্ণীতি প্রতিরোধের জন্য আয়কর আইনে কৃত অপরাধকেও দূর্নীতিমূলক অপরাধ বলে গণ্য হবে।
কেবল জনপ্রশানেই নয়, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং সুশীল সমাজ ও এনজিও-এর দূর্নীতি প্রতিরোধকল্পে দূর্নীতি দমন আইন কার্যকর আছে। সরকার কর্তৃক অনুসৃত ক্রয় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনায়ন। সামগ্রিকভাবে এই সকল আইনকানুন ও নিয়মনীতি শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠা ও প্রতিপালনে অবদান রাখছে।
এই কৌশলটির রুপকল্প বা লক্ষ্য হল ‘সুখী সস্মৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়’ রাষ্ট্র এবং সমাজ হিসেবে এটিই বাংলাদেশের গন্তব্য; আর সেই গন্তব্যে পৌছানোর জন্য রাষ্ট্র এবং সমাজে সুশাসন প্রতিষ্ঠা সবচেয়ে জরুরী কাজ। জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি কৌশলপত্র হিসেবে বিবেচিত এবং সরকার গুরুত্বপূর্ণ অবলম্বন হিসেবে এটি প্রণয়ন করেছেন।
বিষয় ১.৩: জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলের মূল উপাদান ও অন্তর্ভূক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহ
শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠা ও দূর্নীতি প্রতিরোধের ভিত্তি হিসেবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান যেমন গুরুত্বপর্ণ ভুমিকা পালন করে, তেমনি পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও এনজিও এবং শিল্প ও বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, সাকুল্যে অরাষ্ট্রীয় হিসেবে চিহ্নিত প্রতিষ্ঠানসমুহের ভূমিকাও সমধিক গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সমুহ তিনটি অঙ্গে বিভক্ত- বিচার বিভাগ, আইন বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগ। তারা স্বাধীন সত্ত্বায় নিজেদের কর্মবৃত্তে যথাক্রমে বিচারকার্য, রাষ্ট্রের আইন প্রণয়ন ও নির্বাহী কার্য পরিচালনা করে। সংবিধান অনুযায়ী গঠিত আরও কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছ, যেমন, নির্বাচন কমিশন, মহা-হিসাব নিরীক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ, সরকারি কর্ম কমিশন, ন্যায়পাল, যারা সংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গঠিত এবং যারা বাজেট ও আর্থিক নিয়মাবলি অনুসরণ সাপেক্ষ নির্বাহী বিভাগের নিয়ন্ত্রনমুক্ত থেকে স্বাধীনভাবে তাদের কার্য সম্পাদন করে। অন্য আরও কিছু প্রতিষ্ঠান আছে যারা আলাদা আইনের মাধ্যমে সৃষ্ট, এবং ‘সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ” হিসেবে অবিহিত; যেমন দূর্নীতি দমন কমিশন, তথ্য কমিশন, মানবাধিকার কমিশন ইত্যাদি। সংবিধানে স্থানীয় শাসনের যে- ব্যবস্থা নির্দেশ করা হয়েছে তার পরিপেক্ষিতে গ্রাম ও শহরের স্থানীয় শাসন প্রতিষ্ঠান যেমন, ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন গঠন করা হয়েছে। দূর্নীতি দমন ও শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এই সব প্রতিষ্ঠানের সকলের ভূমিকাকেই গুরুত্ব প্রদান করা জরুরী।
বিষয় ১.৪: জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়ন কাঠামো:
সুখী সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে প্রনীত কৌশলে শুদ্ধাচারকে নৈতিক ও সততা দ্বারা প্রভাবিত আচরণগত উৎকর্ষ এবং এই কৌশলে রাষ্ট্র ও সমাজের শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠায় সরকারের সাংবিধানিক ও আইনগত স্থায়ী দয়িত্ব এবং অব্যাহতভাবে পালনের এই লক্ষ্য অর্জনে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে বলে বলা হয়েছে। প্রায় সকল মন্থ্রনালয়/বিভাগ/অনান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমুহে ১ জানুয়ারি ২০২৫ থেকে৩০ জুন ২০১৬ মেয়াদের জন্য শুদ্ধাচার কর্ম-পরিকল্পনা ও বাস্তবায় অগ্রগতি পরিবীক্ষণ কাঠানো প্রনয়ন করে।
এই ধারাবাহিকতায় ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছর থেকে সকল মন্ত্রণালয়/বিভাগ/ সংস্থার পাশাপাশি আওতাধীন দপ্তর/ সংস্থা আওতাধীন মাঠ পর্যায়ের বিভাগীয়/আঞ্চলিক কারর্যলয়সমুহ জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল কর্মপরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ কাঠামো প্রণয়ন করে।
জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল কর্মপরিকল্পনায় পূর্বে অনুসৃত কাঠামোর পাশাপাশি সম্পাদিত কাজের বিপরীতে নাম্বার প্রদান ও সেই আলোকে মূল্যায়নের ব্যবস্থা বহাল রয়েছে।
সকল দপ্তর/সংস্থা মনর্ত্রী পরিষদ বিভাগ কতৃক প্রণীত এ নির্দেশণা অনুসরণপূর্বক স্ব স্ব কার্যালয়ের জাতীয় শুদ্ধাচারের কৌশল কর্ম পরিকল্পনা প্রণয়ন, বাস্তবায়ণ করবে এবং আওতাধীন আঞ্চলিক ও মাঠ পর্যায়ের কারর্যলয় সমুেহের জন্য জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল কর্ম-পরিকল্পনা প্রণয়ন, বাস্তায়ন ও মূল্যায়নের নির্দেশনা ও প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করবে।দপ্তর/সংস্থাসমুহ এই নির্দেশিকা অনুসরণ করে কর্ম-পরিকল্পনায় অন্তভূক্ত কার্যক্রমসমুহ বাস্তবায়ন শেষে মূল্যায়ন করবে।
জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল কর্মপরিকল্পনা:
জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল কর্ম-পরিকল্পনায় প্রতাষ্ঠিনিক ব্যবস্থা, দক্ষতা ও নৈতিকতার উন্নয়ন, শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠায় সহায়ক আইন/বিধি/নীতিমালা/ম্যানুয়াল প্রণয়ন/সংস্খার/হালনাগাদকরণ ও প্রজ্ঞাপন/পরিপত্র বাস্তবায়ন এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে খসড়া প্রণয়ন: ওয়েবসাইডে সেবাবক্্র হালনাগাদকরণ, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, প্রকল্পের ক্ষেত্রে শুদ্ধাচার, ক্রয় ক্ষেত্রে শুদ্ধাচার, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতা শক্তিশালীকরণ, মন্ত্রনালয়/বিভাগ/রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের শুদ্ধাচার সংশ্লিষ্ঠ অনান্য কার্যক্রম, শুদ্ধাচার চর্চার জন্য পূরস্কার প্রদান, কর্ম-পরিবেশ উন্নয়ন, অর্থ বরাদ্দ এবং পবিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন শীর্ষক ১৩টি ক্ষেত্রে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল পকিল্পনা মূল্যায়ন সংক্রান্ত নির্দেশিকা কার্যক্রম নির্ধারণ করবেন বলে উর্ল্লেখ করা হয়েছে
মন্ত্রণালয়/বিভাগের
মন্ত্রণালয়/বিভাগের জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল পকিল্পনার বিভিন্ন কার্যক্রমের বিপরীতে উল্লেখিত প্রতিটি লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী প্রকৃত অর্জন মূল্যয়ন করার জন্য যে নির্দেশিকা প্রদান করা হয়েছে তা হলো;
মন্ত্রণালয়/ বিভাগের ২০১৯-২০ অর্থ বছরের জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল কর্ম-পরিকল্পনার বার্ষিক মূল্যয়ান প্রতিবেদন প্রস্তুতের ক্ষেত্রে নিম্নেক্ত বিষয়াদি ও পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে
- মূল্যায়নে প্রতিবেদন প্রস্তুতের ক্ষেত্রে স্ব স্ব মন্ত্রণালয়/বিভাগসমুহের প্রতিটি কার্যক্রমের আওতায় উল্লেখিত প্রতিটি সূচকের বিপরীতে প্রকৃত অর্জন সক্রানন্ত তথ্যাদি উল্লেখ করতে হবে;
- মন্থ্রণালয়/বিভাগের জাতীয় শুদ্ধাচার কর্মপরিকলর্পনা ও পরীবিক্ষণ কাঠামোতে উল্লেখিত প্রতিটি কার্যক্রমের বিপরীতে অর্জিত ফলাফল উল্লেকপূর্বক জাতীয় শুদ্ধাচর কৌমল কর্ম-পরিকল্পনা মূল্যয়ন প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে হবে;
- মূল্যয়ন প্রতিবেদন প্রস্তুতের ক্ষেত্রে প্রতিটি কার্যক্রমের বিপরীতে মন্ত্রণালয়/বিভাগ/ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন অনুবিভাগ/ অধিশাখা/শাখা হতে প্রাপ্ত অর্জন সংক্রান্ত তথ্যাদি এবং প্রমাণক সমুহ যথাযথভাবে যাচাই করতে হবে এবং এই প্রমাণক/তথ্যের যথার্থতা নিরুপন করতে হবে;
- মন্ত্রণালয়/বিভাগ/রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সমুহের নৈতিকতা কমিটি সরজমিনে যাচাইঅন্তে অর্জনের স্বপক্ষে প্রদত্ত তথ্যের সঠিকতা যাচাইপূর্বক প্রমাণক সমুহ সংরক্ণ করবে এবং জাতীয় শুদ্ধাচার বাস্তবায়ন ইউনিট এর চাহিদা মোতাবেক তা তাৎক্ষনিকভাবে সরবরাহ করবে;
- প্রমাণকের কলেবর বিবেচনা করে ক্ষেত্র বিশেষে মন্ত্রণালয়/বিভাগ/রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রকৃত অর্জনের স্বপক্ষে প্রয়োজনীয় দলিলয়াদি পিডিএফ আকারে ওয়েবসাইটে অপলোড করা যেতে পারে;
- নৈতিকতা কমিটি কর্তৃক পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনান্তে ২০১৯-২০ অর্থ বছরের জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল কর্ম-পরিকল্পনা ও পরিবীক্ষণ কাঠামোর অনুমোদিত মূল্যায়ন প্রতিবেদন নির্ধারিত তারিখের মধ্যে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগে প্রেরণ করতে হবে;
এই ১৩টি ক্ষেত্র হচ্ছে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল কর্ম-পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তায়ন মূল্যায়ন সংক্রান্ত নির্দেশনা অনুসারে যে সকল কাজ করা হতে বলে উল্লেখ করা হয়েছে তা হচ্ছে;
ক্রমিক: ১ প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা:
১.১ : প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার আওতায় জাতীয় শুদ্ধার কৌশ কর্ম-পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও পীবিক্ষণ সংক্রান্ত ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন সমুহ নৈতিকতা কমিটির সভায় অনুমোদিত হতে হবে। এই জন্য প্রতি কোয়াটোরে ১টি করে নৈতিক কমিটির সভা আহবান করতে হবে এবং নৈতিক কমিটির কাজের লক্ষ্যমাত্রা উল্লেখপূর্বক নির্ধারিত ফর্মেটে ত্রৈমাকি ভিত্তিতে বিভাজন করে নৈতিক কমিটির সভার কার্যবিবরণী সংশ্লিষ্ঠ মন্ত্রনালয়/বিভাগে প্রেরণ করতে হবে।
মূল্যায়ন পদ্ধতি: প্রতি কোয়াটারে একটি করে সভা অনুষ্ঠিত হলে পূর্ণ নাম্বার পাওয়া যাবে। কোন কোয়াটারে সভা আয়োজন করা সম্ভব না হলে পরবর্তি সময়ে সভা আয়োজন করা যাবে।তবে, নির্ধারিত ত্রৈমাসিক সভা পরবর্তিতে আয়োজন করা হলে প্রতিটি সভার বিলম্বের জন্য ০.২৫ নম্বর কর্তন হবে।
প্রমানক: নৈতিকতা কমিটির সভার কার্যবিবরণী।
১.২ নৈতি কমিটির সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন:
নৈতিক কমিটির সভায় গ্রহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার নির্ধারণ করতে হবে এবং এর লক্ষ্যমাত্রা ১.২ ক্রমিকের ৬ নম্বর কলামে উল্লেখ করতে হবে।এইক্ষেত্রে প্রতি কোয়াটারে অনুষ্ঠেয় নৈতিক কমিটির সভায় গ্রহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার পৃথকভাবে প্রতি কোয়াটারের (৮-১১ কলামসমুহে) উল্লেখ করতে হবে।
মূল্যায়ন পদ্ধতি: প্রতি ত্রৈমসিকে আয়োজিত সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অর্জন শতভাগ হলে পর্ণ নাম্বর পাওয়া যাবে। তবে, অর্জন শতভাগ না হলে গানিতিক হার নম্বর কর্তন হবে।
প্রমাণক: নৈতিক কমিটির সভার কার্যবিবরণী ও বাস্তবায়ন অগ্রগতির প্রতিবেদন।
ক্রমিক নং ২: দক্ষতা ও নৈতিকতার উন্নয়ন
২.১ সুশাসন প্রতিষ্ঠার নিমিত্ত অংশীজনের অংশগ্রহণে সভা
সকল মন্ত্রনালয়/বিভাগ/রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের আওতাধীন দপ্তর/সংস্থা সমুহে অংশীজনের অংশগ্রহণে সভা আহবান করতে হবে। এখানে অংশীজন বলতে স্ব স্বমন্ত্রনালয়/বিভাগ/রাষ্ঠ্রীয় প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীন/দাপ্তরিক/নাগরিক সেবা গ্রহণকারী যে কোন ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান (সেরকারি-বেসরকারি) এবং আওতাধীন মাঠপর্যায়ের কারর্যলয় সমুহ কিংবা তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বুঝাবে।
২.২: অংশীজনের অংশগ্রহণের সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়রে নির্ধারণ করে নির্ধারিত ফর্মে উল্লেখপূর্বক মূল্যায়ন করার হবে এবঙ প্রমান হিসেবে সভরা রেজুলেশন দাখিল করতে হবে।
২.৩ : কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অংশগ্রহণে চাকরি সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশিক্ষণের আয়োজন,
২.৪: কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অঙশগ্রহণে শাসন সংক্রান্ত প্রশিক্ষণের আয়োজন; এখানে জবাবদিহীতা উপকরণ (Tools) সমুহের চর্চা তথা, বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি, জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল, সেবা প্রদান প্রতিশ্রুতি, অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা, তথা ত্থ্য অধিকার সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ আয়োজনের কথা বলা হয়েছে।
ক্রমিক ৩: শদ্ধাচার প্রতিষ্ঠায় সহায়ক আইন/বিধি/ নীতিমালা/ম্যানুয়াল ও প্রজ্ঞাপন/পরিপত্র এর বাস্তবায়ন এবঙ প্রযোজ্য ক্ষেত্রে খসড়া প্রনয়ন;
এই ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দপ্তর/সংস্থা সমুহ উদ্যোগ গ্রহণ করবে এবং মন্ত্রণালয়/বিভাগ/রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সমুহ প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করবে।
ক্রমিক ৪. ওয়েবসাইডে সেবাবক্্র হালনাগাদকরণ; এই সকল ক্ষেত্রে গ্রহীত কার্যক্রম:
৪.১: সেবা সংক্রান্ত্র টোল ফ্রি নাম্বার সমুহ নির্ধারিত তারিখের মধ্যে স্ব স্ব বাতায়নে দৃশ্যমানকরণ;
৪.২: স্ব স্ব ওয়েবসাইটে শুদ্ধাচার সেবাবক্্র হালনাগাদকরণ; দপ্তর/সংস্থার ওয়েবসাইটে সংযোজিত শুদ্ধাচার সেবাবক্্রে ১. বার্ষিক কর্ম -পরিকল্পনা (স্ব স্ব জাতীয় শুদ্ধাচার কর্ম-পরিকল্পনা, এবং পূর্ববর্তি বছরগুলোর কর্ম-পরিকল্পনা) ২. ত্রৈমাসিক বাস্তবায়ন অগ্রগতি ৩. প্রজ্ঞাপন/নীতিমালা/পরিপত্র/কার্যবিবরণী (নৈতিকতা কমিটি গঠন সংক্রান্ত পত্র, নৈতিকতা কমিটির সভার কার্যবিবরণী সমূহ) এবং ৪. যোগাযোগ (ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা ও বিকল্প শুদ্ধাচার কর্মকর্তার নাম, পদবি, যোগাযোগের ঠিকানা) সংক্রান্ত হালনাগাদ তথ্য সন্নিবেশ করার তারিখ নির্ধারণ করে লক্ষ্যমাত্রা
প্রমাণক: স্ব স্ব ওয়েবসাইট
৪.৩. স্ব স্ব ওয়েবসাইটে তথ্য অধিকার সেবাবক্্র হালনাগাদকরণ
তথ্য অধিকার সেবা বক্স থাকবে ১. দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, আপিল কর্তৃপক্ষ ২. তথ্য অধিকার ফর্ম ৩. আবেক্ষণ ও পরিবীক্ষণ কমিটির সভার কমিটির কার্যবিবরণী এবং ৪. স্বপ্রণোদিতভাবে প্রকাশযোগ তথ্য হালরাগাদ করে সন্নিবেশিত করতে হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
৪.৪. স্ব স্ব ওয়েবসাইটের অধিকার প্রতিকার ব্যবস্থা সেবাবক্্র হালনাগাদকরণ:
দপ্তর/সংস্থার ওয়েবসাইটে সংযোজিত অভেযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা (GRS) সেবাবক্্রে ১. অনিক ও আপিল কর্মকর্তা ; ২. নীতিমালা/নির্দেশিকা/পরিপত্র অভিযোগ ও প্রতিকারের পরিসংখ্যান; এবং ৩. অনলাইনে আবেদন সংক্রান্ত হালনাগাদ তথ্য সন্নিবেশিত করে প্রদর্শন করতে হবে।
৪.৫. স্ব প্রণোদিতভাবে প্রকাশযোগ্য তথ্য হালনাগাদ করে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবে।
ক্রমিক ৫. সুশাসন প্রতিষ্ঠা
৫.১ উত্তম চর্চার তালিকা প্রকাশ করে স্ব স্ব মন্ত্রনালয়/বিভাগে প্রেরণ
৫.২ অনলাইন সিস্টেম অভিযোগ নিষ্পত্তিকরণের শতকরা হার প্রকাশ
ক্রমিক. ৬ প্রকল্পের ক্ষেত্রে শুদ্ধাচার
৬.১. দপ্তর সংস্থা কর্তৃক গ্রহীত সকল প্রকল্পের বাষিক ক্রয় পরিকল্পনা প্রণয়ন করে যথাযথ কর্তৃপক্ষে অনুমোদন ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে লক্ষ্যমাত্র বিভাজন করে প্রদর্শন
৬.২ প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যক্রমের অগ্রগতি পরিদর্শন/পরীবিক্ষণ এবং অগ্রগতির প্রতিদেন ত্রৈমাসিক লক্ষ্যমাত্রর ভিত্তিতে বিভাজন করে প্রদর্শন